ঢাকা , রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নবীনগর প্রেসক্লাবের ৪০ তম বছরে পদার্পন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত নবীনগরকে সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত একটি আদর্শ জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই- এম এ মান্নান।  ৩১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নবীনগরে বিএনপি’র প্রার্থী এম এ মান্নানে’র বিশাল মহা সমাবেশ নবীনগরে বিএনপি’র মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল নবীনগর বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত ৭ প্রার্থী এক মঞ্চে নবীনগরে আওয়ামীলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার! স্বর্গীয় বাসুদেব সূত্রধরের ২৩তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত আব্দুল লতিফের ২৪ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা ‎নবীনগরে সাবেক চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার  নবীনগরের গনিশা এলাকার জোড়া খুনের ঘটনার প্রধান আসামি রিফাত সহ গ্রেপ্তার ২  
নোটিশ :
নিয়মিত সংবাদ পেতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন । startvbd20@gmail.com

নবীনগরে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

  • শাহিন রেজা টিটু
  • আপডেট সময় ০৯:০২:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৯০ বার পড়া হয়েছে

শাহিন রেজা টিটু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা ও পৌর এলাকায় চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনার পরেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

পুলিশের নির্যাতনে যুবক নিহত ফাঁড়ি বন্ধের পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুনরায় চালু গত ২৯ সেপ্টেম্বর নবীনগর থানাধীন সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে মিথ্যা চুরির অভিযোগে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবককে পুলিশ নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। নিহতের হাত-পায়ের নখ ও কপালের চামড়া তুলে চারদিন ধরে নির্যাতনের পর মৃত্যু হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
ঘটনার পর তীব্র প্রতিবাদের মুখে ফাঁড়িটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পাঁচদিন পর পুনরায় ফাঁড়িটি চালু করা হয়।
বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন গত ১৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে গভীর রাতে উমর হাসান (২৪) নামে এক তরুণকে জবাই করে হত্যা করে তার সহপাঠী বন্ধু খাইরুল আমিন (২৫)। পরদিন খুনের দায় স্বীকার করে খাইরুল নবীনগর থানায় আত্মসমর্পণ করে।

প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ১৪ অক্টোবর রাতে নবীনগর পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের প্রবাসী শরিফ মিয়ার বাড়িতে সংঘটিত হয় একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতি। ডাকাত দল তার স্ত্রীকে মারধর করে নগদ ৭ লাখ টাকা, চার ভরি স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ পরে নাটকীয়ভাবে একজনকে আটক করে এক লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা উদ্ধার করলেও বাকী মালামাল ও মূল হোতারা এখনো অধরা।

নিখোঁজের পর কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার লাউর গ্রামে ফারজানা আক্তার জুঁই নামে এক কলেজছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় শোক ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো এলাকা।

জাল নোট ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ২১ সেপ্টেম্বর নবীনগর পৌর এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও ১০ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠলেও পরবর্তীতে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অনেকের ধারণা, মূল হোতারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

ক্রমবর্ধমান চুরি ও ছিনতাই গত দুই মাসে নবীনগর পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে একাধিক মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির ঘটনা ঘটেছে। বাজার, রাস্তা ও আবাসিক এলাকাগুলোতেও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের ক্ষোভ নবীনগর সদর বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন,
নবীনগর এখন অপরাধের টাইমজোনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অপরাধ ঘটছে, কিন্তু প্রশাসন নীরব। মানুষ পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, থানার বর্তমান ওসি মো. শাহিনূর ইসলাম এলাকার জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা দাবি তুলেছেন অভিজ্ঞ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নবীনগরে নতুন করে আইনশৃঙ্খলা পুনর্বিন্যাস করা হোক।

নবীনগর উপজেলার নারী নেত্রী ও সমাজসেবী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল বলেন, পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু, ডাকাতি, চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনূর ইসলাম বলেন,
হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক চুরির ঘটনাগুলো তদন্তাধীন। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বাসক জানান,
থানায় জনবল সীমিত হলেও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে। রাতের টহল জোরদার করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সচেতন মহলের দাবি স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় নবীনগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে নাজুক হয়ে পড়েছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নবীনগর প্রেসক্লাবের ৪০ তম বছরে পদার্পন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

নবীনগরে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

আপডেট সময় ০৯:০২:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

শাহিন রেজা টিটু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা ও পৌর এলাকায় চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনার পরেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

পুলিশের নির্যাতনে যুবক নিহত ফাঁড়ি বন্ধের পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুনরায় চালু গত ২৯ সেপ্টেম্বর নবীনগর থানাধীন সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে মিথ্যা চুরির অভিযোগে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবককে পুলিশ নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। নিহতের হাত-পায়ের নখ ও কপালের চামড়া তুলে চারদিন ধরে নির্যাতনের পর মৃত্যু হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
ঘটনার পর তীব্র প্রতিবাদের মুখে ফাঁড়িটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পাঁচদিন পর পুনরায় ফাঁড়িটি চালু করা হয়।
বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন গত ১৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে গভীর রাতে উমর হাসান (২৪) নামে এক তরুণকে জবাই করে হত্যা করে তার সহপাঠী বন্ধু খাইরুল আমিন (২৫)। পরদিন খুনের দায় স্বীকার করে খাইরুল নবীনগর থানায় আত্মসমর্পণ করে।

প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ১৪ অক্টোবর রাতে নবীনগর পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের প্রবাসী শরিফ মিয়ার বাড়িতে সংঘটিত হয় একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতি। ডাকাত দল তার স্ত্রীকে মারধর করে নগদ ৭ লাখ টাকা, চার ভরি স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ পরে নাটকীয়ভাবে একজনকে আটক করে এক লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা উদ্ধার করলেও বাকী মালামাল ও মূল হোতারা এখনো অধরা।

নিখোঁজের পর কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার লাউর গ্রামে ফারজানা আক্তার জুঁই নামে এক কলেজছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় শোক ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো এলাকা।

জাল নোট ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ২১ সেপ্টেম্বর নবীনগর পৌর এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও ১০ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠলেও পরবর্তীতে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অনেকের ধারণা, মূল হোতারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

ক্রমবর্ধমান চুরি ও ছিনতাই গত দুই মাসে নবীনগর পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে একাধিক মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির ঘটনা ঘটেছে। বাজার, রাস্তা ও আবাসিক এলাকাগুলোতেও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের ক্ষোভ নবীনগর সদর বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন,
নবীনগর এখন অপরাধের টাইমজোনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অপরাধ ঘটছে, কিন্তু প্রশাসন নীরব। মানুষ পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, থানার বর্তমান ওসি মো. শাহিনূর ইসলাম এলাকার জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা দাবি তুলেছেন অভিজ্ঞ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নবীনগরে নতুন করে আইনশৃঙ্খলা পুনর্বিন্যাস করা হোক।

নবীনগর উপজেলার নারী নেত্রী ও সমাজসেবী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল বলেন, পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু, ডাকাতি, চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনূর ইসলাম বলেন,
হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক চুরির ঘটনাগুলো তদন্তাধীন। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বাসক জানান,
থানায় জনবল সীমিত হলেও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে। রাতের টহল জোরদার করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সচেতন মহলের দাবি স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় নবীনগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে নাজুক হয়ে পড়েছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।