
মিঠু সূত্রধর পলাশ: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রাম এখনো কাঁপছে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) গভীর রাতের সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিতে।
যেভাবে দূর সম্পর্কের এক ভাতিজাকে জবাই করে হত্যা করেছে এক বিকৃত মনের মানুষ, তাতে চমকে উঠেছে পুরো গ্রামবাসী।
নিহত যুবক উমর হাসান (২৪) মহেশপুর গ্রামের জাকির হোসেনের পুত্র। ঘাতক খাইরুল আমিন (৩৮) একই গ্রামের বাসিন্দা। একসময় তাদের সম্পর্ক ছিল ইলেকট্রনিক মেস্তুরির ‘গুরু-শিষ্য’-এর, কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে উঠে এসেছে, তা পরিণত হয়েছিল এক ভয়ংকর শারীরিক ও মানসিক আসক্তিতে।
স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এল ১০ বছরের নির্যাতন
থানা সূত্রে জানা যায়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক খাইরুল আমিন উমর হাসানকে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় দশ বছর আগে উমরকে ইলেকট্রনিকস কাজ শেখার জন্য খাইরুলের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তখন থেকেই তাদের মধ্যে এক অস্বাভাবিক সম্পর্কের সূচনা হয়। বয়সে বড় খাইরুল উমরকে নিজের বিকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষার ফাঁদে ফেলে মানসিকভাবে বন্দি করে রাখে।
এই অমানবিক নির্যাতন চলে দীর্ঘ দশ বছর ধরে। এক পর্যায়ে উমর সব সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি. বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে খাইরুলের মনে জমে ওঠে প্রতিশোধের আগুন। হত্যার আগের দিনই এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। উমরের এই বিদ্রোহ খাইরুল সহ্য করতে পারেনি।
হত্যার পর খাইরুল নবীনগর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মহেশপুর বিল থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি।
পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, মাকেও আঘাত
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেই ক্ষোভই ছিল এই হত্যার মূল প্রেরণা।
গত শুক্রবার গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিল, তখন খাইরুল সিঁধ কেটে প্রবেশ করে উমরের ঘরে। হাতে ছিল ধারালো ছুরি। প্রথম কোপেই কাঁধ আর ঘাড় বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। এরপর বারবার আঘাত করে রক্তে ভাসিয়ে দেয় ঘর। শেষ আঘাতটি ছিল গলায়—জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তবেই থামে ঘাতক।
চিৎকার শুনে উমরের মা রাহেলা বেগম ছুটে এলে খাইরুল তাকেও ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা এসে পুলিশকে খবর দেয়।
নবীনগর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, “ঘাতক পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় সে স্বীকার করেছে। এই অস্বাভাবিক সম্পর্কের জেরে মুক্তি পেতে চাওয়া উমরকেই সে হত্যা করে।”
বিকৃত যৌন আসক্তি, একাই শিকার করত
অনুসন্ধানে স্থানীয় জনসাধারণ এবং ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, খাইরুলের মধ্যে বিকৃত যৌন আসক্তি ছিল প্রবল। সে বিয়েও করেছিল একসময়, কিন্তু বিকৃত চাহিদা মেটাতে না পারায় স্ত্রীকে তালাক দেয়। এরপর নিজের শিষ্য উমরকেই বানায় লালসার শিকার। উমর যখন তার হাত থেকে মুক্তি চাইতে শুরু করে, তখনই জন্ম নেয় ঘৃণা ও হিংসা। এই বিকৃত আসক্তি থেকেই খাইরুল তাকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
                           
 মিঠু সূত্রধর পলাশ
																মিঠু সূত্রধর পলাশ								 








